স্বামী-স্ত্রীসহ তিন জনকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগে বড় ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামে। মা-বাবা ও ছোট ভাইকে হত্যায় সাদ্দামের স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জোরারগঞ্জ থানার ওসি নূর হোসেন মামুন। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি ছুরি বাড়ির পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাদ্দামের স্ত্রীকেও আটক করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, মো. মোস্তফা সওদাগর (৫৬), তার স্ত্রী জোসনারা বেগম (৪৫) এবং তাদের ছোট ছেলে আহামদ হোসেন (২৫)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) মর্গে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তিন বছর ধরে নুরুল মোস্তফার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলের বিরোধ চলছিল। মেজো ছেলে, স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেন মোস্তফা। এ থেকে বিরোধের সূত্রপাত।
স্থানীয় জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর মধ্যম সোনাপাহাড় ওয়ার্ডের সদস্য মনির আহম্মদ ভাসানী জানান, সম্পত্তি নিয়ে মোস্তফার সঙ্গে বড় ছেলে সাদ্দাম এবং ছোট ছেলে আলতাফ হোসেনের বনিবনা ছিল না। তবে এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কোনো সালিস-দরবারও হয়নি।
নিহত নুরুল মোস্তফার ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, ঘটনার রাতে তিনি মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় একটি মাছের আড়তে কর্মরত ছিলেন। ভোরবেলায় ফোনে খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। এ সময় আলতাফ বলেন, ‘মেজো ভাইয়ের আগে আমি বিয়ে করায় বাবা আমাকে তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
গতকাল সকালে প্রথমে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ, এরপর পিআইবি ও চট্টগ্রাম সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ডিএনএ ও হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আব্দুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ির ভেতর ডাকাতির কোনো আলামত পাইনি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র গোছানো ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ বিশেষ করে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।’ হত্যাকাণ্ডের পর ছাদেক হোসেন সাদ্দাম ও তাঁর স্ত্রী আইনুন নাহারকে আটক করা প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘরের ভেতরে সাদ্দামকে স্ত্রীসহ অক্ষত পাওয়া গেছে। তাই আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। থানায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
পুলিশ আরো জানায়, নিহত নুরুল মোস্তফা ও জোসনা আক্তারের গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরির আঘাত পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজন একই কক্ষে মেঝেতে পড়ে ছিলেন। নিহত আহমদ হোসেনের গলা কাটা অবস্থায় নিজের শয়নকক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল।